ঝালকাঠিতে সুপারি চাষে মিশ্র আনন্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝালকাঠিঃ ঝালকাঠির প্রায় প্রতিটি গ্রামেই সুপারি চাষ হয়ে থাকে। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় সুপারির ফলন হয়েছে আশানুরূপ। তবে দামে মন্দা থাকায় চাষিদের মুখে হাসি থাকলেও মনে লেগেছে হতাশার ছোঁয়া।

জেলার ৪টি উপজেলার ৩২টি ইউনিয়নের ৪৭১টি গ্রামে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭০০ হেক্টর জমিতে সুপারি আবাদ হয়েছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কুড়ি (প্রায় ২১০টি) সুপারি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়

ফলন ভালো, দাম কম

রাজাপুর উপজেলার ৫৪টি গ্রামে এবার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক কিসমত ফরাজী জানান, “গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ফলন তিনগুণ বেশি হয়েছে। আকারেও সুপারিগুলো বড়। তবে দামে সন্তুষ্ট নই।”
একই গ্রামের রাসেল ব্যাপারী বলেন, “২ একর জমিতে চাষ করা সুপারির ফলন খুব ভালো। পোকার আক্রমণ নেই, কিন্তু দাম কম। ইতোমধ্যে দুই লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছি।”

স্থানীয় হাটগুলো—ছত্রকান্দা, সিঅ্যান্ডবি বাজার, রাজাপুরের বাগড়ি, লেবুবুনিয়া, বাদুরতলা, নলছিটির ভৈরবপাশা ও কাঠালিয়ার কৈখালীসহ জেলার অন্তত ৮৯টি সাপ্তাহিক হাটে প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি টাকার সুপারি কেনাবেচা হয়।

দেশ–বিদেশে যাচ্ছে ঝালকাঠির সুপারি

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাইকাররা সুপারি কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করছেন। এছাড়া ঝালকাঠির সুপারি ভারত, চীন ও থাইল্যান্ডে রপ্তানি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পাইকার গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আমরা এখান থেকে ট্রাকভর্তি সুপারি কিনে চট্টগ্রামে নিয়ে যাই। সেখানকার আড়তে বাছাই করে বড় সাইজের সুপারি বিদেশে রপ্তানি করি।”

কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,“আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত সুপারি চাষের জন্য অনুকূল থাকায় এ বছর ফলন খুব ভালো হয়েছে। কৃষকদের সুপরিকল্পিতভাবে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, যাতে এ ফসল আরও বেশি অর্থনৈতিক অবদান রাখতে পারে।”

রাজাপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, শুধু ওই উপজেলাতেই ৩০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে সুপারি চাষ হয়েছে। গত এক যুগে এটি সবচেয়ে বেশি ফলন বলে জানানো হয়েছে।

ক্রেতা–বিক্রেতা উভয়ের প্রত্যাশা

ক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন বেশি হওয়ায় তুলনামূলক কম দামে সুপারি কিনতে পারছেন। অন্যদিকে চাষিরা আশাবাদী, বাজারদর বাড়লে ভালো লাভ পাওয়া সম্ভব হবে।

দামে মন্দা থাকলেও ফলন ভালো হওয়ায় ঝালকাঠির গ্রামীণ অর্থনীতিতে সুপারি এখন গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। উৎপাদন খরচ কম ও রোগবালাই কম থাকায় চাষিরা দিন দিন সুপারি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *