বিশেষ প্রতিবেদকঃ ঢাকা জেলার দোহার ও সাভার উপজেলায় দায়িত্ব পালনকালে উপজেলা প্রকৌশলী হানিফ মোহাম্মদ মুর্শিদী এবং তার সহযোগী উপ-প্রকৌশলী মো. রাজিব হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, তারা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নাম ব্যবহার করে কাজ না করেই বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার এলজিইডি ও রাজস্ব তহবিলের আওতায় থাকা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে পিআইসি ও আরএফকিউ স্কীম গ্রহণ করে কাগজে-কলমে কাজ দেখানো হলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই কাজ করা হয়নি। প্রতিটি পিআইসি স্কীমের পরিমাণ ছিল প্রায় ২০ লক্ষ টাকা এবং আরএফকিউ স্কীমের ১০ লক্ষ টাকা। এই প্রকল্পগুলোর একটি বড় অংশে শুধুমাত্র কাগজে ফাইল খুলে টাকা উত্তোলনের পর ভাগাভাগি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জানুয়ারি ২০২৫ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত সময়কালের প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাজের বিপরীতে ১৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া নিম্নমানের ঢালাই ও ইউনিব্লক ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণের ঘটনাও সামনে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, হানিফ মুর্শিদী বিভিন্ন কোম্পানি থেকে কমিশন নিয়ে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করেছেন, যার ফলে নির্মিত সড়কগুলো অল্প সময়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
দোহারে দায়িত্ব পালনকালে হানিফ মুর্শিদী ও রাজিব হোসেন একইভাবে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পে পিআইসি পদ্ধতিতে টাকা তুললেও বাস্তব কোনো কাজ সম্পন্ন হয়নি বলে জানা গেছে। এমনকি দোহারের উপজেলা পরিষদ ও ডরমেটরি ভবনের কাজেও কমিশনের মাধ্যমে নিম্নমানের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হানিফ মুর্শিদীর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেনি, কারণ তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিক সালমান এফ রহমানের ছোট ছেলের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে উপস্থাপন করতেন। তবে ২০২৪ সালের আগস্টের পর তিনি হঠাৎ রাজনৈতিক পরিচয় বদলে বিএনপি’র ঘনিষ্ঠ হয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে রাজিব হোসেনের ক্ষেত্রেও অভিযোগ আছে যে, তার স্ত্রী গণভবনে কর্মরত থাকায় তিনি সেই পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ ও কর্মকর্তাদের ভয় দেখিয়ে নিজের অনিয়মকে ঢেকে রাখতেন।
বর্তমানে সাভার উপজেলার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় হানিফ মুর্শিদীর বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি কার্যাদেশ প্রদানের আগেই ঠিকাদারদের কাছ থেকে ৫% ঘুষ আদায় করতেন এবং কাজের সময় সংশোধিত প্রাক্কলনের মাধ্যমে অতিরিক্ত ১৫% পর্যন্ত অর্থ ভাগাভাগি করতেন।
দোহারের কিছু উন্নয়ন প্রকল্পে দেখা গেছে, ঠিকাদার কাজ শেষ না করেই অগ্রিম বিল তুলে নিয়েছে এবং পরবর্তীতে পলাতক হয়ে যাওয়ায় সেই টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী হানিফ মোহাম্মদ মুর্শিদী বলেন, “সব অভিযোগই মিথ্যা। আমি সাভারে মাত্র তিন মাস ছিলাম, জুন মাস পর্যন্ত কাজও পাইনি। এসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ। আমি বিএনপি করি, ভয় পাই না, যা ইচ্ছা লিখুন।”
তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন নয়। সংশ্লিষ্ট নথি ও সাইট পরিদর্শনে অনিয়মের একাধিক প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করেছে একাধিক তথ্যসূত্র। তাই উপজেলা প্রকৌশলী হানিফ মোহাম্মদ মুর্শিদীর কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছ তদন্ত এখন সময়ের দাবি।

