বিশেষ প্রতিবেদকঃ গণপূর্ত অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতার আবারও আলোচনায়। দায়িত্ব হস্তান্তরের মাত্র এক ঘণ্টা আগে তিনি এমন এক পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা এখন পুরো অধিদপ্তরে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে—তিনি আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ব্যাকডেট ব্যবহার করে তিনজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে (ই/এম) অবৈধভাবে পদোন্নতির প্রস্তাব দিয়েছেন। বিষয়টি শুধু প্রশাসনিক নয়, আইনি দিক থেকেও গুরুতর অপরাধ বলে মনে করছেন অনেকে।

জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে শামীম আখতার একটি ফাইল স্বাক্ষর করেন, যার স্মারক নম্বর ২৫.৩৬.০০০০.২১৫.১২.১০৭.১৮–১৩৫৭। ফাইলটি তিনি স্বাক্ষর করেছেন ২৬ অক্টোবরের ব্যাকডেটে, যদিও প্রকৃত স্বাক্ষরের তারিখ ছিল ২৮ অক্টোবর দুপুরে। সেই ফাইলেই মো. জিয়াউর রহমান, মো. জাহাঙ্গীর আলম ও তাসফিন মুহাইমিন হক নামের তিন প্রকৌশলীর পদোন্নতির প্রস্তাব করা হয়। অথচ এই বিষয়ে একটি মামলা তখনও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন ছিল (Civil Petition for Leave to Appeal No. 4340 of 2024)। আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন—মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান অবস্থা বজায় রাখতে। অর্থাৎ, নতুন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। কিন্তু সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠিয়ে দেন।

অভ্যন্তরীণ সূত্রের দাবি, এই প্রস্তাবের পেছনে ছিল প্রায় ১ কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন। বিশেষ করে এক নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছ থেকে নগদ অর্থ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে শামীম আখতারের বিরুদ্ধে। ঘুষের বিনিময়ে তৈরি সেই ফাইলেই তিনি ব্যাকডেট লিখে স্বাক্ষর করেন, যেন সব কিছু আগে থেকেই অনুমোদিত ছিল।

চাকরিবিধি অনুযায়ী, যেসব কর্মকর্তা সিনিয়র স্কেল বা বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নন, তারা পঞ্চম গ্রেডের বেশি পদে যেতে পারেন না। কিন্তু সেই নিয়ম উপেক্ষা করেই এই তিন কর্মকর্তার জন্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে চলতি দায়িত্বের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ফলে সরকারি চাকরিবিধি, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও আদালতের নির্দেশ—সবকিছুকেই উপেক্ষা করেছেন শামীম আখতার।

গণপূর্তের ভেতরে অনেকে বলছেন, এটি শুধু এক ব্যক্তির দুর্নীতির উদাহরণ নয়—বরং পুরো সিস্টেমে গেঁথে থাকা এক ধরনের ফ্যাসিবাদী মানসিকতার প্রতিফলন। অনেকেই মনে করেন, শামীম আখতার ছিলেন আগের সরকারের সময় ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। তখন ছাত্রলীগ ঘনিষ্ঠ প্রকৌশলীদের নানা সুবিধা দিয়ে পদোন্নতি ও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল—যার বিরুদ্ধে বিসিএস প্রকৌশলীরা আদালতে মামলা করেছিলেন।

সেদিন বিকেলে দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে যে ব্যাকডেট করা ফাইলে স্বাক্ষর করে তিনি বিদায় নেন, সেটি এখন অনেকের চোখে “দুর্নীতির প্রতীকী দলিল”। গণপূর্ত অধিদপ্তরের ভেতরে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরছে—“দায়িত্ব ছাড়ার আগের ঘণ্টায় একজন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী কীভাবে আদালত বিচারাধীন অবস্থায় পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠাতে পারেন?”

অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শামীম আখতার শেষ দিনেও দুর্নীতিকে বিদায় জানাতে পারেননি; বরং ঘুষকেই বানিয়ে গেলেন নিজের বিদায়ী উপহার।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *