বিশেষ প্রতিবেদকঃ বিগত সরকারের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব করদাতার অনেকে বিদেশে পালিয়ে গেছেন, কেউ আত্মগোপনে, আবার কেউ কারাগারে রয়েছেন। ফলে তাদের কাছ থেকে কর আদায়ে এনবিআর এখন বড় ধরনের বিপাকে পড়েছে।

সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই বেশ কিছু সাবেক মন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী ও আমলাদের ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ জব্দ করা হয়। ফলে তারা রিটার্ন জমা দিতে বা কর পরিশোধ করতে পারছেন না। অনেকেই ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার আবেদন করেছেন, কিন্তু জব্দ হিসাবের কারণে তাদের কর দেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কিছু করদাতা জানিয়েছেন, সম্পদ বিক্রি করেও কর শোধ করা যাচ্ছে না, কারণ এসব সম্পদের মালিকানার দলিলপত্রও অনেক ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এনবিআরের একাধিক সূত্র বলছে, এসব করদাতার আইনজীবীরাও এখন আত্মগোপনে বা মামলার মুখে রয়েছেন। ফলে তাদের হাতে থাকা আর্থিক নথি, আয়-ব্যয়ের বিবরণ ও কর ফাইলগুলো নতুন আইনজীবীদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এতে রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় জটিলতা আরও বেড়েছে।

সর্বশেষ করবর্ষে অনেকে রিটার্ন জমা দেননি বা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন। আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে সর্বোচ্চ চার মাস সময় বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও, তাতে কর না দিলে জরিমানা যোগ হয়ে পাওনা আরও বেড়ে যাচ্ছে।

এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ ইচ্ছা করলে জব্দ ব্যাংক হিসাব থেকেই কর পরিশোধ করতে পারেন। তবে অতীতে দেখা গেছে, হিসাব খুলে দেওয়ার পরও অনেক প্রভাবশালী করদাতা পাওনা পরিশোধ করেননি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, রাজনৈতিক প্রভাব ও আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে এই প্রভাবশালী করদাতারা কর পরিশোধ এড়িয়ে যাচ্ছেন। ব্যাংক হিসাব জব্দ বা সম্পত্তি নিলামে তুললেও বাস্তবে কর আদায় কঠিন হয়ে পড়েছে।

এদিকে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, সব হিসাব একসঙ্গে জব্দ রাখলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই যাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অনিয়মের প্রমাণ নেই, তাদের হিসাব খুলে দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে।

তদন্তে দেখা গেছে, সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, আমলা, ব্যবসায়ী, পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীর ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। শুধু আনিসুল হক, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ওবায়দুল কাদের, শাজাহান খান, টিপু মুনশি, দীপু মনি, জুনাইদ আহমেদ পলকসহ অনেক সাবেক মন্ত্রীর নামই করখেলাপিদের তালিকায় রয়েছে। কারও কর ফাঁকি ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

সব মিলিয়ে এনবিআর এখন এই বিপুল রাজস্ব আদায়ে নতুন কৌশল খুঁজছে। কিন্তু বিদেশে পালিয়ে থাকা, আত্মগোপনে থাকা ও জব্দ সম্পদের জটিলতার কারণে কর আদায় প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে উঠছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *