নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস এমন এক অবস্থা, যেখানে রক্তনালির ভেতরে চর্বি ও অন্যান্য উপাদান জমে ধমনিগুলো শক্ত হয়ে যায়। এই জমাট উপাদানকে বলা হয় প্লাক। প্লাক জমলে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে হৃদ্পিণ্ড প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না। এভাবেই একসময় দেখা দিতে পারে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্টারি প্লাক রাতারাতি তৈরি হয় না; এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত প্রক্রিয়ার ফল। তাই প্রদাহ কমাতে ও প্লাক গঠনের ঝুঁকি হ্রাসে কিছু প্রাকৃতিক পানীয় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
নিচে এমন চারটি পানীয়ের কথা বলা হলো, যা রক্তনালির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।
পানি ও ডিটক্স পানীয়
রোজ পর্যাপ্ত পানি পান দেহের প্রদাহ কমাতে এবং রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। পানির সঙ্গে লেবু, পুদিনাপাতা বা শসা যোগ করে ডিটক্স পানীয় হিসেবেও খাওয়া যায়। এই পানীয় শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং কোষে অক্সিজেন সরবরাহে সহায়তা করে।
টাটকা ফলের রস
সপ্তাহে দুই–তিন দিন টাটকা ফলের রস খাওয়া যেতে পারে। অবশ্যই এমন ফলের রস বেছে নিতে হবে, যাতে বাড়তি চিনি বা লবণ যোগ করা হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—ফলের রসের চেয়ে গোটা ফল খাওয়াই উত্তম, কারণ ফলে থাকা আঁশ (ফাইবার) প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সম্ভব হলে খোসাসহ ফল খাওয়া আরও উপকারী।
বিটরুটের রস
বিটরুটে রয়েছে নাইট্রেট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আয়রন, যা রক্তনালির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে সারা বছর বিটরুট পাউডার খাওয়ার প্রয়োজন নেই। মৌসুমে টাটকা বিটরুট বা এর রস খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হওয়া বিটরুট পাউডারে প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি নাও থাকতে পারে, তাই এর উপকারিতা নিশ্চিত নয়।
গ্রিন–টি
গ্রিন–টিতে থাকা ক্যাটেচিন ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তবে দুই–এক কাপ নয়, নিয়মিত প্রতিদিন চার কাপ পর্যন্ত গ্রিন–টি পান করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এতে ওজন কমে, শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি হ্রাস পায় এবং রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায়।
জীবনধারাই মূল বিষয়
শুধু কিছু পানীয় খেলেই রক্তনালির স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা মেলে না। খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম, ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ—এই চারটি দিক প্লাক প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
খাবারের তালিকায় রাখা উচিত উদ্ভিজ্জ খাদ্য, গোটা শস্য (whole grain) ও আঁশসমৃদ্ধ খাবার। আর এড়িয়ে চলতে হবে চর্বিযুক্ত, অতিরিক্ত লবণ বা চিনি দেওয়া খাবার।
যাঁদের রক্তনালিতে ইতিমধ্যেই প্লাক জমেছে, তাঁদের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা গ্রহণ জরুরি। কেবল স্বাস্থ্যকর পানীয়র ভরসায় থাকা বিপজ্জনক হতে পারে।
শেষ কথা
নিয়মিত স্বাস্থ্যকর পানীয় পান, সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি—এই সব মিলেই রক্তনালির যত্ন নেওয়া সম্ভব।
গোটা ফল ও সবজি থেকেই মেলে সর্বাধিক উপকার।