হবিগঞ্জ প্রতিবেদকঃ হবিগঞ্জের মাধবপুরে তেলমাছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গাছ পাচার, অনিয়ম ও দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ ফাঁস করেছেন তারই অধীনে কর্মরত বন রক্ষক সাদিকুর রহমান। প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছেছে ওই বন রক্ষকের জবানিতে ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের এক অডিও রেকর্ড, যেখানে উঠে এসেছে নানা দুর্নীতির তথ্য।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান তেলমাছড়া সংরক্ষিত বনের বিট কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগকারী সাদিকুর রহমান একই কার্যালয়ের ফরেস্টগার্ড ছিলেন। তবে সম্প্রতি রহস্যজনক কারণে তাকে পার্বত্য অঞ্চলে বদলি করা হয়েছে।
রেকর্ডিংয়ে সাদিকুর রহমান দাবি করেন, মেহেদী হাসান আগে কক্সবাজারে কর্মরত অবস্থায় রাজস্বের ৮৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন। সে কারণে তিনি দুই বছর ধরে ওএসডি ছিলেন। বর্তমানে তিনি তেলমাছড়ায় নিয়মিতভাবে গাছ পাচার করছেন—এমন অভিযোগও করেন সাদিকুর। তার বক্তব্যে উঠে আসে, আইয়ুব খানের ফ্লোর সংলগ্ন সেগুন বাগান থেকে একাধিক ট্রাকে বড় বড় গাছ পাচার করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে ফরেস্টগার্ড সাদিকুর রহমান বলেন, “বন কর্মকর্তার এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমাকে অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছে।” তিনি আরও দাবি করেন, মেহেদী হাসান নিয়মিত গাঁজা সেবন করেন, তার সরকারি বাসভবন নাকি গাঁজার আড্ডাখানা। চোখ-মুখ সবসময় লাল থাকে, ফলে তিনি নিয়মিত বনে টহলও দিতে পারেন না।
সাদিকুর রহমান আরও অভিযোগ করেন, মেহেদী হাসান বন্যপ্রাণী পাচারের সঙ্গেও যুক্ত। তেলমাছড়ার এক বাচ্চা ভালুককে পাচার করে দিয়েছেন তিনি। এমনকি স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও নাকি সুবিধা নেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এক ব্যবসায়ী তাকে পুরস্কার হিসেবে এক লাখ টাকার খাট উপহার দেন—বনের গাছ কাটার অনুমতি দেওয়ার বিনিময়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে সাতছড়ি উদ্যানে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায়ও মেহেদী হাসানের নাম উঠে এসেছে। সাংবাদিকরা সেগুন গাছ পাচারের তথ্য সংগ্রহে গেলে হামলার শিকার হন, আর পরবর্তীতে বন বিভাগের করা মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় মেহেদী হাসান ছিলেন দ্বিতীয় সাক্ষী।
অন্যদিকে, সাদিকুর রহমানকে সহকর্মীরা সৎ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবেই জানেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, সত্য কথা বলার জন্য যেন পরবর্তীতে আর কোনো অন্যায় শাস্তির মুখে না পড়েন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিট কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, “এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। সাদিকুরের মাথা ঠিক নেই—সে যা খুশি তাই বলে।”
এ প্রসঙ্গে সিলেট বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবুল কালাম জানান, “বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”