নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অ্যাডহক ম্যানেজিং বোর্ডে চলছে পদত্যাগের ঢল। কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলামের পর এবার বোর্ডের সদস্য ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন ও ডা. মাহমুদা আলম মিতুও পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) তারা রাষ্ট্রপতির কাছে পৃথক চিঠি পাঠিয়ে বোর্ডের অনিয়ম, স্বচ্ছতার অভাব এবং চেয়ারম্যানের একতরফা সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

কোষাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যান কোনো বৈঠক ছাড়াই একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা বোর্ডের নীতিমালা ভঙ্গ করছে। তিনি বলেন, “যেখানে আমার মতামতের কোনো মূল্য নেই, সেখানে থেকে লাভ নেই।”

ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন, আরও অনেকে করবেন। কারণ, চেয়ারম্যান ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বোর্ডের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আদেশ দিচ্ছেন, যা প্রতিষ্ঠানের নিয়মবিরোধী।

অন্যদিকে, ডা. মাহমুদা আলম মিতু তার পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, বোর্ডের মেয়াদ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হলেও কোনো নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। বরং নানা অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান ও মহাসচিব বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই নীতিগত পরিবর্তন আনছেন, যা প্রতিষ্ঠানের নিয়মবহির্ভূত।

ডা. মিতু আরও লিখেছেন, রেড ক্রিসেন্টে সুশাসন ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বোর্ড গঠিত হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে এখন সেটি ব্যাহত হচ্ছে। তার মতে, বোর্ড কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মানদণ্ড ভেঙে গেছে।

বোর্ডের কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নির্বাচন আয়োজন নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখন চরমে। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নীতিমালা পরিবর্তনের মাধ্যমে বিতর্কিত ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ তাদের।

প্রসঙ্গত, রেড ক্রিসেন্টের বর্তমান বোর্ডটি গঠিত হয় গত ৫ মার্চ, যার মেয়াদ প্রথমে তিন মাস এবং পরে আরও তিন মাস বাড়ানো হয়। শর্ত ছিল, ইউনিট পর্যায়ের নির্বাচন শেষে কেন্দ্রীয় বোর্ডের নির্বাচন সম্পন্ন করা। কিন্তু সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই বোর্ডে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নানা অনিয়ম ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত। বর্তমান চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একতরফা সিদ্ধান্ত, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পুনর্বহাল, এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে। এসব নিয়ে কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকরা আন্দোলনও করেছেন, তবে এখন বোর্ডের অভ্যন্তরে ভাঙন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফলে দেশের অন্যতম মানবিক এই প্রতিষ্ঠানটি কার্যত স্থবির অবস্থায় পড়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *