বিশেষ প্রতিবেদকঃ দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের সবচেয়ে বড় সংস্থা— স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)— এখন নিজেই এক ধরনের অচলাবস্থায় পড়েছে। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত রাস্তা, সেতু, বিদ্যালয়, বাজার, ড্রেনেজসহ অসংখ্য প্রকল্পে ভূমিকা রাখা এই প্রতিষ্ঠানে এখন নেতৃত্বের শূন্যতা। দীর্ঘদিন ধরে প্রধান প্রকৌশলীর পদটি খালি থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম মন্থর হয়ে পড়েছে, আর কর্মকর্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে হতাশা ও অনিশ্চয়তা। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, “এলজিইডি এখন একেবারে অভিভাবকহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।”

এলজিইডির ভেতরে এখন অভিযোগ উঠেছে— যোগ্যতার চেয়ে প্রভাবই হয়ে উঠেছে পদোন্নতির প্রধান মানদণ্ড। যেসব কর্মকর্তা বছরের পর বছর মাঠে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন, তারা পড়ছেন উপেক্ষার শিকার। এর সবচেয়ে আলোচিত উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে প্রকৌশলী মো. জাবেদ করিমের নাম। দীর্ঘ কর্মজীবনে সততা, অভিজ্ঞতা ও সুনামের কারণে সহকর্মীদের আস্থাভাজন হলেও, নানা প্রভাব ও চাপের কারণে প্রধান প্রকৌশলী পদে তাঁর নাম বারবার উপেক্ষিত হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন দপ্তরের ভেতরের সূত্র।

একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এখন কে কতটা যোগ্য তা নয়, কে কাকে খুশি করতে পারে সেটাই মুখ্য হয়ে গেছে। এতে করে পরিশ্রমী কর্মকর্তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।”
একজন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আরও স্পষ্টভাবে বলেন, “জাবেদ করিমের মতো দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাকে যদি বারবার বাদ দেওয়া হয়, তবে এলজিইডির ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে। উন্নয়নের কাজ যারা বোঝেন, তাদেরই নেতৃত্বে থাকা উচিত।”

এই অস্থিরতার প্রভাব পড়ছে প্রকল্প বাস্তবায়নেও। মাঠপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হচ্ছে, প্রশাসনিক কাজেও দেখা দিচ্ছে জট। ফলে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের গতি স্পষ্টভাবে মন্থর হয়ে পড়েছে।
একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিবের ভাষায়, “প্রধান প্রকৌশলীর পদ শুধু প্রশাসনিক নয়— এটি একটি নীতিনির্ধারণী অবস্থান। সেখানে যোগ্যতার বদলে সম্পর্কনির্ভর পদায়ন হলে ক্ষতি হবে রাষ্ট্রেরই।”

দপ্তরের ভেতরে এখন প্রবল অসন্তোষ বিরাজ করছে। সিনিয়র প্রকৌশলীরা বলছেন, যেখানে মেধা ও পরিশ্রমের মূল্য নেই, সেখানে কেউ আর নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করবে না। তাদের মতে, এলজিইডির নেতৃত্বে এমন একজনকে আনতে হবে, যিনি মাঠ ও প্রশাসন— দুটো দিকই বোঝেন এবং রাজনীতি থেকে উন্নয়নকে আলাদা রাখতে পারেন। অনেকেই মনে করেন, প্রকৌশলী জাবেদ করিমের মধ্যেই সেই যোগ্যতা ও নেতৃত্বগুণ রয়েছে।

সবশেষে, প্রশ্ন এখন একটাই— এই নেতৃত্বহীনতা কতদিন চলবে?
দপ্তরের ভেতরে গুঞ্জন চলছে, রাজনৈতিক বিবেচনা আর লবিবাজির জালে আটকে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে এই স্থবিরতার প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায়ও।
বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র এলজিইডিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এখন প্রয়োজন দৃঢ়, যোগ্য ও নিরপেক্ষ নেতৃত্ব— যা কেবল প্রতিষ্ঠান নয়, রাষ্ট্রীয় উন্নয়নকেও নতুন গতি দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *