নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শনিবার বিকালে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী পাঁচ দিনও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেছেন, অক্টোবর ও নভেম্বরে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ তৈরি হলে সেগুলো শক্তি অর্জন করে এবং এর প্রভাবে বাংলাদেশ-ভারত কিংবা মিয়ানমার অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে মেঘমালা তৈরি অব্যাহত থাকে। যার ফলে কখনো কখনো হালকা, কখনো ভারী বা কখনো মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়।

আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতির মধ্যেই শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাসহ তিনটি বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়।

এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে লঘু চাপ আকারে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাংশজুড়ে অবস্থান করছে।

এর প্রভাবে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর এই দুই মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ তৈরি হয়। কখনো কখনো তা গভীর নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়েও রূপ নেয়। এটি যখন উপকূল অতিক্রম করে তখন বাংলাদেশ বা পার্শ্ববর্তী এলাকায় সারি সারি মেঘমালা হয়, দমকা হাওয়া হয়, দমকা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারি বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে সাধারণত।

যে কারণে ভারী ও টানা বৃষ্টিপাতের শঙ্কা থাকলেও শনিবারের বৃষ্টিপাতকে খুব একটা অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা।

তিনি বলছিলেন, শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে যে বৃষ্টি হয়েছে এটা ভারী বৃষ্টিপাত, তবে স্বাভাবিক। এই পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল আবহাওয়া অফিস।

এমন অবস্থার মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অফিস টানা পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে- রবিবার থেকে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের দু’এক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে।

সোমবার বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

মঙ্গলবার- বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু’এক জায়গায় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া বুধবার খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এরপরই আস্তে আস্তে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে বলেও বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বছরের এই সময়ে সাধারণত আমনের চাষাবাদ হয়ে থাকে। শনিবার বিকাল থেকে কখনো ভারী কখনো হালকা বৃষ্টিপাত চলে একটানা দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে।

বাংলাদেশে নভেম্বর ও ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারি অর্থাৎ শীতের দিকে ধানসহ শীতকালীন নানা সবজি চাষাবাদ হয়ে থাকে। এই সময় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলে সেটি সাধারণত ফসলের জন্য খুব একটা ক্ষতির কারণ হয় না বলে মনে করেন কৃষিবিদরা।

কৃষিবিদ তালহা জুবায়ের বলেন, যদি এই বৃষ্টিপাত অল্প হতো সেটা জমি কিংবা ফসলের জন্য উপকারী ছিল। কিন্তু শনিবার যে বৃষ্টি হয়েছে সেটা তো ভয়াবহ বৃষ্টি। নভেম্বরে তো এমন বৃষ্টি আমরা সাধারণত দেখি না।

কৃষিবিদরা বলছেন, এই ধরনের ভারি বৃষ্টিপাত হলে অনেক ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে করে যে সব ফসলের মূল মাটির নিচে থাকে সেগুলো বেশিরভাগ সময় নষ্ট হয়ে যায়।

তিনি বলছিলেন, শনিবার যে ভারী বৃষ্টি হয়েছে রবিবার থেকে যদি আবার রোদ ওঠে তখন অনেক সময় এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। আর যদি এই বৃষ্টি একটানা দুই তিন দিন বা আরো সময় ধরে চলতে থাকে তাহলে তা ফসলের জন্য ভীষণ ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এই মৌসুমে সাধারণত মাঠে ধান থাকে। কৃষকদের কেউ কেউ আবার ধান কেটে কেবল মাঠে রেখেছে মাত্র। এমন সময় ভারী কিংবা টানা বৃষ্টি ধানের বড়সড় ক্ষতি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন কৃষিবিদরা।

কৃষিবিদ জুবায়ের বলছিলেন, অনেক মানুষের জমিতে এখনো ধান রয়েছে। অনেকে ধান কেটে জমিতে রেখেছে। এরকম মুষলধারে বৃষ্টি ধানের জন্য বড় ক্ষতি। কারণ টানা বৃষ্টি হলে ধানগুলো ভেজা থাকবে। আবার যে সব ধান এখনো কাটা হয়নি সেগুলোর অনেক ফসল মাটির সাথে মিশে যেতে পারে।

বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *