পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে—বেশিরভাগ ঠিকাদার কাজ শেষ না করেই প্রকল্পের টাকা তুলে নিয়েছেন, আর এখন তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডির কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ২৫ থেকে ২৮টি প্রকল্পের আওতায় রাস্তা, ব্রিজ, সাইক্লোন শেল্টার ও ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও অধিকাংশই অসমাপ্ত রয়েছে। কোথাও শুধু পাইলিং করে ফেলে রাখা হয়েছে, আবার কোথাও রাস্তা খুঁড়ে ইট-বালু ফেলে রাখা অবস্থায় কাজ বন্ধ। এতে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয়দের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই ঠিকাদাররা হঠাৎ কাজ বন্ধ করে উধাও হয়ে যান। ফলে উপজেলার উন্নয়ন কার্যক্রম কার্যত থমকে গেছে। অসমাপ্ত রাস্তা ও ভাঙা ব্রিজ এখন এলাকাবাসীর দুর্ভোগের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলজিইডির অধীনে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে—জিওবিএম, বিজেপি, আইবিআরপি, আইআরআইডিপি-৩, সিসিটিএফ, আইপিসিপি, পিডিআরআইডিপি ও ডিআরআরআইডব্লিউপি। এর মধ্যে বিজেপি প্রকল্পের অধীনে মোল্লারহাট–সাপলেজা সড়ক এবং পারসাতুরিয়া–আদম আলী ব্রিজসংলগ্ন সড়কের কাজ ২০২২ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইফতি ইটিসিএল অর্ধেক কাজ করে থেমে গেছে।
একইভাবে আইবিআরপি প্রকল্পের অধীনে শিয়ালকাঠি ইউপির সামনে ৬ কোটি টাকার গার্ডার ব্রিজের কাজ পাইলিংয়ের পর থেকে আর এগোয়নি। পারসাতুরিয়া সালেকিয়া মাদ্রাসা, সয়না রঘুনাথপুর, জয়কুল খেয়াঘাট, চিরাপাড়া সুবিদপুর, জোলাগাতি ফলইবুনায়া ও কেউন্দিয়া সড়কের গার্ডার ব্রিজগুলোও একই অবস্থায় পড়ে আছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ—এসব প্রকল্পের অধিকাংশ কাজের ঠিকাদারি করেছেন সাবেক এমপি মহিউদ্দিন মহারাজ ও তার ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজ হোসেন। আইআরআইডিপি-৩ প্রকল্পের অধীনে চিরাপাড়া জিএম স্কুল–ডুমজুড়ি সড়কের কাজ মেসার্স ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ আংশিকভাবে সম্পন্ন করে ফেলে রেখেছে। অন্যদিকে ইফতি ইটিসিএল হোগলাবেতকা বাজার থেকে পুলেরহাট সড়কের কাজও শেষ করেনি।
এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে শিয়ালকাঠি দারুদ সুন্নাত কামিল মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টার এবং সোনাকুর ফেরিঘাট সড়ক নির্মাণ প্রকল্পও অসমাপ্ত অবস্থায় আছে। একইভাবে হোগলা হাইস্কুল থেকে নান্না মেম্বার বাড়ি, চিরাপাড়া সুবিদপুর রোড ও রঘুনাথপুর মেঘপাল সড়কের কাজও অল্প করে বন্ধ রেখেছে ইফতি ইটিসিএল।
এভাবে মোট ৩৫ কোটি টাকার প্রায় ২৮টি প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে আছে, আর ঠিকাদাররা কার্যত পলাতক।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, “বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত কাজ শেষ করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত মনিটরিং করছেন।”