ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপ মোদির

নয়াদিল্লি প্রতিনিধিঃ দীপাবলি উপলক্ষে কথা হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। ভারতীয় সময় আজ বুধবার ভোররাতে সেই কথোপকথনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এক ভারতীয় গণমাধ্যম তিন ওয়াকিবহাল সূত্রের বরাতে জানায়, অচিরেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ধার্য মার্কিন শুল্ক ৫০ থেকে কমে ১৫-১৬ শতাংশ হতে চলেছে।

ইংরেজি গণমাধ্যম ‘মিন্ট’ আজ বুধবার ভোর ছয়টার সময় এ খবর দেয়। তারা বলে, বিষয়টির সঙ্গে অবহিত আছেন এমন তিন ব্যক্তির কাছ থেকে তাঁরা শুল্ক কমানোর এই নিশ্চয়তার খবর পেয়েছে।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। শুল্ক কমানোর শর্ত হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন চায়, রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত সস্তায় জ্বালানি কেনা বন্ধ করুক। জ্বালানি কেনার কারণেই শাস্তি হিসেবে ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে মোট শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশ।

মার্কিন শর্ত মানা না-মানা নিয়ে ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। যদিও বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভারত ইতিমধ্যেই রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। আগামী ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সপ্তাহেই বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন যে ভারত ধীরে ধীরে রুশ তেল কেনা কমিয়ে দেবে। হুট করে তা বন্ধ করা যায় না।

অবশ্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দাবি করেছিলেন, ওই দিন (যেদিন ট্রাম্প ওই দাবি করেছিলেন) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ফোনে কোনো কথা হয়নি। এরপরই ট্রাম্প নতুন করে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, রাশিয়ার তেল কেনা না কমালে আরও চড়া হারে শুল্ক চাপানো হবে।

আজ বুধবার দীপাবলির শুভেচ্ছা জানাতে মোদিকে ফোন করেন ট্রাম্প। সে খবর জানিয়ে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আজই তাঁর সঙ্গে মোদির কথা হয়েছে। দুজনের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বেশির ভাগই বাণিজ্যসংক্রান্ত। বাণিজ্য আলোচনার চরিত্র কেমন ছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে পুরোনো দাবির কথা তিনি নতুন করে তোলেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো। অনেক বছর ধরেই উনি আমার ভালো বন্ধু। মোদি বলেন, রাশিয়া থেকে খুব বেশি তেল তাঁরা কিনবেন না। তিনিও আমার মতো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান চান।’

সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্পের মন্তব্যের পরপরই আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী মোদি ‘এক্স’ হ্যান্ডলে এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলার প্রসঙ্গের অবতারণা করেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁকে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সেই পোস্টেই মোদি লেখেন, সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দুই দেশ ঐকবদ্ধভাবে দাঁড়াবে।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি ঝুলে আছে প্রধানত কৃষি ও ডেইরি ক্ষেত্রে বোঝাপড়া না হওয়ায়। যুক্তরাষ্ট্র চায়, ভারতের কৃষিক্ষেত্র মার্কিন পণ্যের জন্য উন্মুক্ত হোক। ডেইরিক্ষেত্রও। অথচ তা করতে ভারতের আপত্তি তীব্র। কৃষিক্ষেত্র নিয়ে কোনো রকম সমঝোতা না করার কথা প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রকাশ্যে বারবার ঘোষণা করেছেন। এমন কথাও বলেছেন যে এ জন্য যেকোনো রকমের ত্যাগ স্বীকারেও তিনি প্রস্তুত।

ওয়াকিবহাল সূত্রের বরাতে ‘মিন্ট’ বলেছে, দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া অনুযায়ী জিনগতভাবে পরিবর্তিত নয় এমন ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানিতে ভারত ছাড় দিতে পারে। ভারত নীতিগতভাবে জিনগতভাবে পরিবর্তিত (জিএম) শস্যের চাষ ও বাজারজাত করার বিরোধী। জৈব জ্বালানির ব্যবহার কমাতে ভারত কিছুদিন ধরে পেট্রল ও ডিজেলে ইথানল মেশাচ্ছে। ভারতে আখ থেকে প্রয়োজনীয় ইথানল প্রস্তুত হচ্ছে। মার্কিন ভুট্টা এলে তা থেকেও ইথানল প্রস্তুত করা যেতে পারে। তা ছাড়া তা পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।

চীন হুট করে মার্কিন ভুট্টা আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ভুট্টা রপ্তানির ওপর জোর দিচ্ছে। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন ৫২০ কোটি ডলারের ভুট্টা আমদানি করেছিল। ২০২৪ সালে তারা আমদানি করেছে মাত্র ৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার মূল্যের ভুট্টা। ঝুপ করে ভুট্টা রপ্তানি ১ হাজার ৮৫৭ কোটি ডলার থেকে কমে ১ হাজার ৩৭০ কোটি ডলারে নেমে যাওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসন বিপাকে পড়েছে। কারণ, ভুট্টা প্রধানত চাষ হয় রিপাবলিকান রাজ্যগুলোয়।

ওয়াকিবহাল সূত্র অনুযায়ী, মানুষ ও পশুখাদ্য হিসেবে জিনগতভাবে পরিবর্তিত নয়, এমন সয়াবিন আমদানিও ভারত বাড়াতে রাজি হয়েছে।

চলতি মাসের চতুর্থ সপ্তাহে (২৬-২৮ অক্টোবর) মালয়েশিয়ায় আসিয়ান শীর্ষ বৈঠকের অবসরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা হতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে সেখানেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির বৈঠক হবে। অবশ্য মোদি যে আসিয়ান শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেবেন, তা এখনো সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *