বিশেষ প্রতিবেদকঃ গণপূর্ত অধিদপ্তরে নীরবে চলছে বড় এক নাটকীয় পরিবর্তন। বছরের পর বছর যিনি নানা অভিযোগ, অনুসন্ধান আর বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন— সেই মো. কায়কোবাদ এখন হয়েছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল/মেকানিক্যাল)। ২১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখা–৭ এর প্রজ্ঞাপনে তার এই নিয়োগ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়।

অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, কায়কোবাদের এই উত্থান হঠাৎ নয়— বরং একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত প্রচেষ্টার ফল। প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতারের আশীর্বাদে গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেটের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন কায়কোবাদ নিজেই। তার পাশে আছেন ইএম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আশরাফ আলম, ইএম বিভাগ–৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়াজ মোহাম্মদ তানভীর আলম, ইএম বিভাগ–৫ এর সাইদ তামজিদ হোসেন এবং ইএম বিভাগ–৬ এর তরিকুল আলম। অভিযোগ আছে, তারা মিলে একটি জটিল কমিশনচক্র চালান— যেখানে টেন্ডার, সরঞ্জাম ক্রয় ও প্রকল্প অনুমোদনের নামে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয় নিয়মিতভাবে।

এদিকে, গণপূর্তের অনেক প্রকৌশলীই প্রকাশ্যে না হলেও হতাশা লুকাতে পারছেন না। তাদের বক্তব্য, মেধা আর যোগ্যতা নয়, এখন পদোন্নতির মূল শর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে সিন্ডিকেটের প্রতি আনুগত্য। এক সিনিয়র কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে চললে মেধাবীরা একসময় এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যাবে। যোগ্যতার আর কোনো দাম থাকবে না।”

অভিযোগ আরও আছে, সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইএম বিভাগের প্রকল্পগুলোতে চলছে একের পর এক অনিয়ম। সরঞ্জাম কেনা থেকে শুরু করে লিফট বসানো, এসি সার্ভিসিং কিংবা বিদ্যুৎ রক্ষণাবেক্ষণ— সব ক্ষেত্রেই চলছে অতিমূল্য নির্ধারণ আর বিল ফোলানোর খেলা। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও এসব অনিয়মের প্রমাণ মিললেও, সিন্ডিকেটের প্রভাবের কারণে সেই ফাইলগুলো পরে থাকে অকার্যকর অবস্থায়।

বিশ্লেষকদের মতে, কায়কোবাদের এই পদোন্নতি কেবল একজন কর্মকর্তার সাফল্য নয়— এটি গণপূর্তের ভেতরে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের জয়ের প্রতীক। এতে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা আরও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অনেকে এখন জিজ্ঞেস করছেন— “গণপূর্তে কি তবে যোগ্যতার যুগ শেষ, শুরু হলো আনুগত্যের রাজনীতি?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *