বিশেষ প্রতিবেদকঃ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর একটি বিশাল প্রকল্পে ঘুষ, অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এক প্রকল্প পরিচালক এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠে এসেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, “রিজিওনাল অ্যান্ড আরবান ট্রান্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (RUTDP)” নামের এই প্রকল্পে প্রায় ১১২২ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয় ব্যাকডেটে ফাইল স্বাক্ষরের মাধ্যমে। জানা গেছে, বরাদ্দের ক্ষেত্রে গড়ে ৫ শতাংশ হারে ঘুষ লেনদেন হয়েছে, যেখানে প্রকৌশলীর এক আত্মীয় আর্থিক লেনদেনের দায়িত্বে ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা যায়, গত ১৪ ও ১৫ অক্টোবর রাত পর্যন্ত ওই প্রকল্প পরিচালক অফিসে থেকে পুরোনো তারিখে একাধিক ফাইল স্বাক্ষর করেন। এসব ফাইলের মাধ্যমে দেশের ৬৯টি পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে বড় অঙ্কের বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে কিছু পৌরসভায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে, আবার অনেকগুলোর টেন্ডার মূল্যায়ন (ইভ্যালুয়েশন) প্রক্রিয়া চলছে।
বরাদ্দের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, নিজ জেলা ও আশপাশের এলাকায় বেশি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেমন, দিনাজপুর সদর পৌরসভা পেয়েছে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা, বগুড়া সদর ৫২ কোটি এবং নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভা ৪৬ কোটি টাকার বরাদ্দ। এতে অভিযোগ উঠেছে, বরাদ্দ বণ্টনে স্বচ্ছতা ছিল না; বরং “তদবির ও দরদাম” ভিত্তিতেই অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় আউটসোর্সিং নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় ২৭০ জন নিয়োগে প্রতি প্রার্থীর কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এসব অর্থ আদায় করেছে কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ একটি চক্র। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি সূত্র জানিয়েছে, এসব অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তদুপরি, এলজিইডির ভেতর আরও বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের আগস্টে অভ্যন্তরীণ সংকটের সময় উপজেলা প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষকসহ বিভিন্ন পদে শতাধিক বদলি হয়, এবং প্রতিটি বদলির বিপরীতে ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া প্রকল্পের কনসালটেন্ট ও আউটসোর্সিং নিয়োগেও আত্মীয়স্বজনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “বরাদ্দ কিংবা নিয়োগ—সব ক্ষেত্রেই সম্পর্ক ও টাকার প্রভাবই ছিল মুখ্য।”
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী প্রকৌশলী রাজু আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে এলজিইডির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, “যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তদন্তের সুযোগ দিতে হবে।”
বর্তমানে ১১২২ কোটি টাকার প্রকল্পে ঘুষ ও অনিয়মের এই অভিযোগ এলজিইডির অভ্যন্তরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকাকালীন নেওয়া সব সিদ্ধান্তের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া সত্য উদঘাটন সম্ভব নয়। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যে এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
