নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিতে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য—মাত্র এক বছরে আদানির বিদ্যুৎ আমদানিতে প্রায় ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
সরকার পরিবর্তনের পরই প্রকাশ্যে আসে এসব অনিয়মের তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎ কেনার সময় শুল্ক ও কর অব্যাহতি দেওয়া হলেও, এর জন্য কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে। অথচ এ ধরনের কর ছাড় দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র এনবিআরের।
এই অনিয়ম যাচাইয়ের জন্য দুদক তিন সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। উপ-পরিচালক আল-আমিনের নেতৃত্বে থাকা এই দলে আছেন আরও দুই কর্মকর্তা—মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন ও মাহমুদুল হাসান। তারা আদানির সঙ্গে করা পুরো চুক্তিটি খতিয়ে দেখবেন—চুক্তির কাঠামো, আর্থিক যৌক্তিকতা, সম্ভাব্য ক্ষতি ও স্বার্থসংঘাতসহ সব বিষয়েই বিস্তারিত নিরীক্ষা হবে। ৪৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে চুক্তি বাতিলের সুপারিশও করতে পারবে কমিটি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মার্চে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। এরপর থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের ওপর শুল্ক ও অন্যান্য কর পরিশোধ করা হয়নি বলে জানায় শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। প্রতিবেদনে বলা হয়, পিডিবি ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় এনবিআর বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই আদানিকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আগের সরকারের সময়ে করা চুক্তিগুলো পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে গঠিত জাতীয় কমিটি ১১টি বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি, যার মধ্যে আদানির ১,৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গড্ডা প্রকল্পও রয়েছে, তা পর্যালোচনা করছে।
দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুক্তিতে কোনো অনিয়ম বা বেআইনি সুবিধা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
