অভাবের শিকলে বাঁধা বাবা পেলেন মানবিক সহায়তা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ অভাবের তাড়নায় দুই সন্তানকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের লালন মিয়া। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সেই দুই সন্তানকে বিক্রি করা পিতার হাতেই তুলে দেওয়া হলো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।

সরকারের ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় লালন মিয়াসহ সাত ভিক্ষুক পেলেন নতুন জীবিকার উপকরণ। কেউ পেলেন ছাগল, কেউ পেলেন ভ্যান, আবার কেউ পেলেন ছোট দোকান করার সামগ্রী।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা নাছরিন তার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উপকারভোগীদের হাতে এসব উপকরণ তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফাহিমুল আরেফিন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কে.এম. বশির উদ্দিন তুহিনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবাকর্মীরা।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভিক্ষুকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সাতজনের মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বুড়িশ্বর ইউনিয়নের লালন মিয়াকে দেওয়া হয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, আয়েশা বেগমকে প্লাস্টিক সামগ্রী বিক্রির জন্য ভ্যান, হোসনা বেগমকে মুদি দোকানের মালামাল, জয়রানী দেবনাথ ও রুপবানু বেগমকে তিনটি করে ছাগল, বিষ্ণু সরকারকে দেওয়া হয়েছে দুই মটকা সিদল শুটকি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রৌশন আলী পেয়েছেন মুদি দোকানের মালামাল।

লালন মিয়া বলেন, ‘আমার ৫ সন্তান ছিল। অভাবের কারণে দুইটা সন্তান বিক্রি করছিলাম। এখন সরকার আমারে রিকশা দিছে। এই রিকশা চালাইয়া আমি পরিবার লইয়া বাঁচমু। ভিক্ষা করন (করা) লাগব না।’

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রৌশন আলী বলেন, ‘২০ বছর ধইরা ভিক্ষা কইরা সংসার চালাইছি। কেউ সাহায্য করে নাই। সমাজসেবা অফিস এখন মাল কিন্যা দিছে, আমার বউ দোকান চালাইব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা নাছরিন বলেন, ভিক্ষাবৃত্তি কোনো পেশা নয়, এটি সামাজিক অভাবের প্রতিফলন। আমরা চাই কেউ যেন ভিক্ষা না করে, নিজের পরিশ্রমে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারে। এই কর্মসূচি সেই লক্ষ্যেই নেওয়া। ভিক্ষুকদের কর্মে ফেরাতে ব্যাটারিচালিত ভ্যান, দোকানের মালামাল ও অন্যান্য উপকরণ প্রদান করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *