বিশেষ প্রতিবেদকঃ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে অনিয়ম যেন থামছেই না। এবার নতুন ঝামেলার নাম “অনুদানের আট মেশিন”। নিয়মকানুন মানা ছাড়াই এসব যন্ত্র গ্রহণ করা হয়েছিল, আর এখন সেগুলোই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত আগস্টে ইনস্টিটিউটের প্যাথলজি বিভাগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান ডা. আব্দুল্লাহ আল মুয়ীদ খান ‘এবিসি করপোরেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আটটি অত্যাধুনিক মেশিন গ্রহণ করেন— কোনো অনুমোদন ছাড়াই। মেশিনগুলোর মধ্যে ছিল রক্ত পরীক্ষা, বায়োকেমিস্ট্রি ও অন্যান্য ল্যাব টেস্টে ব্যবহৃত যন্ত্র। কিন্তু হাসপাতালের কেউ কেউ এই অননুমোদিত অনুদানকে বৈধ করার জন্য চাপ দিচ্ছেন, আবার অনেকে এর কঠোর বিরোধিতা করছেন। ফলে প্রশাসন পড়েছে দ্বিধায়— অনুদান নিলে নিয়মভঙ্গের অভিযোগ, না নিলে প্রভাবশালী মহলের অসন্তুষ্টি।

আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে। এবিসি করপোরেশনের বিপণন কর্মকর্তা আহসানুল রেজা হলেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. একরামুল রেজার ভাই। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠানটি অননুমোদিতভাবে মেশিন সরবরাহ ও ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি পরিষ্কার করতে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী চারটি বিভাগকে লিখিতভাবে জানতে চান— এসব মেশিন তাদের দরকার কি না। কিন্তু চার বিভাগ— মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও রক্ত পরিসঞ্চালন— সবাই লিখিতভাবে জানায়, এই যন্ত্রগুলোর প্রয়োজন নেই। কারণ, তাদের বিভাগে ইতিমধ্যেই পর্যাপ্ত মেশিন সচল রয়েছে।

অভিযুক্ত ডা. মুয়ীদ স্বীকার করেছেন, নিয়ম না মেনে মেশিনগুলো গ্রহণ করেছেন, তবে দাবি করেছেন যে হাসপাতালের স্বার্থেই তা করেছেন। আর ডা. একরামুল রেজা বলেছেন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তার ভাইয়ের হলেও, তিনি কোনো তদবির করেননি।

বর্তমানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। সহকারী পরিচালক জানিয়েছেন, হয়তো মেশিনগুলো ফেরত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে, এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত আছে।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, অনুদানের নামে যদি কেউ স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করে, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। বিষয়টি নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *